অনলাইনে কীভাবে ড্রপশপিং ব্যবসা

টাকা ছাড়াই কীভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন?

টাকা ছাড়াই কীভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন

অনলাইনে কীভাবে ড্রপশপিং ব্যবসা করবেন? আমরা অনেকেই আছি যারা অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই। অনলাইন বিজনেসের প্রতি আমাদের অনেকেরই আগ্রহ আছে। কিন্তু সাধারনত বিজনেস করতে গেলে অনেক পুঁজির প্রয়োজন হয়। তবে ইন্টারনেটে কল্যাণে এমন এক ব্যবসা আমাদের কাছে আছে যেটা করতে কোনো পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। এর জন্য দরকার একটি ল্যাপটপ। ভালো ইন্টারনেট সংযোগ। দক্ষতা, সময় ও ধৈর্য্য। এটার নাম ড্রপশিপিং ব্যবসা।

এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে ড্রপশিপিং ব্যবসা কীভাবে করে তার ধারণা দিচ্ছি। এই ব্যবসা শেখার জন্য ইউটিউবে অনেক কোর্স আছে। সেগুলো দেখে নিতে পারেন। How to start a dropshipping business with no money.

ড্রপশিপিং ব্যবসা কী

জনপ্রিয় কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্বস্ত ই-কমার্স ওয়েবসাইটের পণ্য আপনি আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটে প্রচার করলেন। তারপর সেখান থেকে তা বিক্রয় করলেন। এটাকেই ড্রপশিপিং ব্যবসা বলা হয়। কিন্তু এখানে আপনার লাভ কোথায়?

আপনি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট যেমন- আলী এক্সপ্রেসের কোনো একটি পণ্য আপনার ওয়েবসাইটে একটু মূল্য বৃদ্ধি করে বিজ্ঞাপন দিলেন। সেই বিজ্ঞাপন দেখে কেউ সেটা কিনতে অর্ডার দিলো। আপনি খরিদ্দারের সেই পণ্যটির অর্ডার কাস্টমারের ঠিকানা সহকারে আলী এক্সপ্রেসে দিয়ে দিলেন। আলি এক্সপ্রেস পণ্যটি কুরিয়ারের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিলো।

কাস্টমার মূল্য পরিশোধ করলে আপনি আপনার লাভের অংশ রেখে আসল দামটি আলী এক্সপ্রেসকে দিয়ে দিলেন।

ধরুন এ্যমাজনে একটি ঘড়ির দাম ১৫ ডলার। আপনি ওই ঘড়িটিটি আপনার ওয়েবসাইটে ২০ ডলার মূল্যে বিক্রয় করার বিজ্ঞপ্তি দিলেন। যদি কেউ আপনার কাছে ওই পণ্যটি অর্ডার করে, তাহলে আপনি ১৫ ডলার আসল মূল্য এ্যমাজনকে পরিশোধ করে, বাকি ৫ ডলার নিজের কাছে রেখে দিলেন।
এখন তো বুঝেছেন ড্রপশিপিং বিজনেস কী।

ড্রপশিপিং ব্যবসার সুবিধা-অসুবিধা
সুবিধা সমূহ
 
সহজে স্টার্ট করা যায়।
ড্রপশিপিং ব্যবসা অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে সহজে শুরু করা যায়। একটি ওয়েবসাইট ও ব্যাংক একাউন্ট এবং পেপাল একাউন্ট খুলেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

কম পুঁজিতে।
কম পুঁজিতেই ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। প্রথম অবস্থায় ওয়েবসাইট ডোমেইন ও ওয়েবসাইট ডিজাইন করার জন্য অর্থ খরচ করতে হবে।
ভার্চুয়াল স্টোর।

ড্রপশিপিং ব্যবসায় কোনো জায়গার প্রয়োজন নেই। দোকান ভাড়া করতে হয় না। প্রয়োজন একটি ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ।

ঝুঁকিহীন বিজনেস।
ড্রপশিপিং ব্যবসায় ঝুঁকি অনেক কম। কেননা কোনো পণ্য স্টক করতে হয় না। বিক্রি না হলে পণ্য নষ্ট হবার ভয় নেই।

ডেলিভারি নিয়ে ঝামেলা নেই।
এই ব্যবসায় পণ্য ডেলিভারির চিন্তা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের হয়ে থাকে। তারাই প্যাকেটিং করে কুরিয়ারের মাধ্যমে কাস্টমারের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে।

বাড়তি ইনকাম।
আপনি বিদেশি পণ্যের সাথে সাথে দেশের উৎপাদন করা বা আপনার উৎপাদিত পণ্যও বিক্রি করতে পারেন। এর জন্য আলাদা কোনো খরচ করতে হবে না।

অসুবিধা সমূহ
সম্পূর্ণ দায়বদ্ধতা আপনার থাকবে।
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যদি ভুল পণ্য বা নষ্ট পণ্য সরবরাহ করে, তাহলে এর জন্য কাস্টমার আপনাকেই দায়ী করবে। কাস্টমারকে মূল্য ফেরত দেওয়া লাগতে পারে।

শিপিং চার্জ নিয়ে সমস্যা।
কাস্টমার যদি একই সময় একাধিক পণ্য অর্ডার করে এবং সেই পণ্যগুলো আপনার আলাদা আলাদা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আনতে হয়, তাহলে আপনাকে আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ দিতে হবে। যেটা কাস্টমারের কাছ থেকে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

অল্প লাভের ব্যবসা।
প্রথম অবস্থায় এই ব্যবসায় লাভ খুবই কম হবে। কিন্তু সময় দিতে হবে অনেক বেশি। যেটা আপনার পক্ষে সহজতর নাও হতে পারে।

বাংলাদেশে কীভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা করবেন?
ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুলতে হবে। এই ব্যবসা সম্পূর্ণ অনলাইনে করতে হয়। প্রতিটা ব্যবসার জন্য দোকান প্রয়োজন। এই ব্যবসার দোকান হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট। আপনাকে অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।

ব্যবসা নিবন্ধন করুন।
আপনি দেশের আইন মোতাবেক আপনার ব্যবসা নিবন্ধন করুন।

এই নিবন্ধন কেন জরুরি?
যদি আপনি নিবন্ধন না করেন তবে অনেক ধরণের সমস্যা হতে পারে। নিবন্ধন ব্যতিত বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানির জন্য বিভিন্ন আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন। কোন ধরণের পণ্য আমদানি করবেন, সেগুলোর জন্যও রয়েছে নানান ধরণের লাইসেন্স।
চাইলেই যে কেউ লাইসেন্স ছাড়া দেশে কোনো ফার্মেসির দোকান দিতে পারেন না। তেমনিভাবে চাইলেই সরকারের অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানি করতে পারবেন না।

দেশীয় আইন সম্পর্কে জানুন।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে বিভিন্ন বিধি নিষেধের সম্মুখীন হতে হয়। বিধি-নিষেধগুলো ভালোভাবে জেনে নিন।
কোন খাদ্য পণ্যগুলোয় BFSA অর্থাৎ বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই, তা জানুন।

ব্যাংকে একটি একাউন্ট খোলা।
পণ্যগুলো যেহুতু বিদেশ থেকে আনছেন, তাই লেনদেনের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন। এমন একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন যার শাখা বিভিন্ন দেশে আছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এমনই এক ব্যাংক। চীনেও তাদের শাখা রয়েছে।

পেপাল একাউন্ট খোলা।
ড্রপশিপিংয়ের ব্যবসায় একটি পেপাল অ্যাকাউন্ট খুব প্রয়োজন।
সাধারণত পণ্য সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থাগুলো পেমেন্ট দ্রুত চায়।
পেপালের মাধ্যমে খুব দ্রুত টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে লেনদেন করা যায়। এটা বিকাশের মতোই এক ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার ব্যবস্থা। বিদেশে সাধারণত পেপালের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়।

পণ্যের লিস্ট করুন।
কোন কোন পণ্য আপনি বিক্রি করবেন সেটার লিস্ট করুন। বর্তমান ট্রেন্ডের পণ্যগুলো সম্পর্কে জানুন। সব সময় বিক্রি হয় এমন পণ্যগুলোর লিস্ট করুন। একেক সিজনে এক এক ধরনের পণ্য বিক্রয় হয়। যেমন শীতকালে জুতা, জ্যাকেট, মাফলার ইত্যাদি।
বর্ষাকালে ছাতা, রেইনকোট।

কম মূল্যে পণ্য কিনুন।
একই পণ্য একেক ওয়েবসাইটে একেক মূল্যে বিক্রি হয়। যদি কোনো পণ্য আলিবাবায় ২০ ডলারে তো এ্যমাজনে ১৬ ডলার। তখন নিশ্চয় আপনি এ্যমাজন থেকেই অর্ডার দেবেন।

পণ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও সত্য রিভিউ।
কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইটের ওপর আস্থা রেখে পণ্য অর্ডার করবে। যদি ডেলিভারির পর গ্রাহক দেখে পণ্য নষ্ট বা শর্তানুযায়ী কাজ করছে না, তাহলে তারা আপনার ই-কমার্স সাইট সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা করবে। যেটা আপনার ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ হবে। এর জন্য আপনার উচিত সেই পণ্য সম্পর্কে খুব ভালোভাবে যাচাই করা। ইন্টারনেটে সেগুলোর রিভিউ দেখা।

ড্রপশিপিং ব্যবসার কিছু টিপস।
ওয়েবসাইট ডিজাইন

ওয়েবসাইটটিকে খুব সুন্দর করে ডিজাইন করুন। যাতে গ্রাহক সহজেই অর্ডার করতে পারে। দেশের জনপ্রিয় ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোর ডিজাইন দেখে নিতে পারেন। এছাড়া Shopify এর মাধ্যমে এই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

পপুলার পণ্য-সামগ্রী।

যে পণ্যগুলো এখন সবচেয়ে বেশি পপুলার সেগুলো অবশ্যই আপনার সাইটে রাখবেন। সেই সাথে কিছু আনকমন পণ্যও রাখতে পারেন। নারীরা কমদামে বিদেশি কসমেটিক্স কেনার জন্য অনলাইনে ভিজিট করে থাকে। কসমেটিকসের একটি শাল স্টক রাখতে পারেন সাইটে।

পণ্যের মূল্য নির্ধারণ।

পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জ ও ব্যাংক খরচ ইত্যাদি মাথায় রেখে মূল্য ধার্য করবেন।
প্রাথমিকভাবে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কিছুটা কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করবেন।

প্রচুর ধৈর্যের কাজ এটা।

এই ব্যবসায় রাতারাতি উন্নতি করা সম্ভব নয়। এর পেছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে। ধৈর্য সহকারে কাজ করতে হবে। যদি আপনার ধৈর্য ও সময় না থাকে তাহলে এই ব্যবসায় না নামাটাই ভালো।

বিশেষ সুবিধা।

আপনি হয়তো ওয়েবসাইট বানাতে জানেন না। এছাড়া ওয়েবসাইট বানানো ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো টাকা আপনার কাছে নেই। এর জন্য আপনি ‘Chip Chip’ বা ‘Shopify’ এর সাহায্য নিতে পারেন।

সোসাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার।

ব্যবসার জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচার না করেন তাহলে ব্যবসা এগোবে না। তাই আপনাকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এর জন্য অবশ্য কিছু টাকা খরচ হবে।
ফেসবুক বিজ্ঞাপন প্রচার করার খুব ভালো একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে অনেক মানুষের কাছে বিজ্ঞাপন প্রচার করা সম্ভব।

কিছু বাস্তবতা যা সবাই লুকায়।
আপনি হয়তো ভাবছেন এটা অনেক সহজ ব্যবসা। বিনা পুঁজির ব্যবসা। বাস্তবে এটা এতটা সহজ নয়।

এটা সহজ নয় কেন?

প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা দরকার।

প্রযুক্তি ব্যবহারে অর্থাৎ ওয়েবসাইট পরিচালনায় দক্ষ না হলে ড্রপশিপিং ব্যবসা করা সম্ভব নয়। ওয়েবসাইট সর্বদা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এর জন্য আপনাকে এ সকল ব্যাপারে দক্ষ হতে হবে।

চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ কাজ।

ড্রপশিপিং ব্যবসায় চরম প্রতিযোগিতা চলে। যদি আপনার চেয়ে কম রেটে অন্য প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি করে, তাহলে আপনার কাছে অর্ডার কম আসবে।

ডেলিভারি নিয়ে জটিলতা।

যেহেতু পণ্যগুলো বিদেশ থেকে আসবে, সেহেতু আসতে আসতে অনেক দিন সময় লাগতে পারে। যদি বেশি সময় লাগে তাহলে কাস্টমার আপনার উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে।

আইনি জটিলতা।

ড্রপশিপিং ব্যবসায় আইনি জটিলতা অনেক। গ্রাহক যদি মামলা করে যে তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তাহলে কিন্তু আপনি বড় সমস্যায় পড়তে পারেন।

ড্রপশিপিং ব্যবসা নিয়ে কিছু কথা।
ড্রপশিপিং ব্যবসা করে টাকা ইনকামের মাধ্যমে অনেক মানুষ আজ কোটিপতি। ধৈর্য ও সততার সাথে এই ব্যবসা করলে আপনিও সফল হবেন। মনে রাখা উচিত এই ব্যবসা সবার জন্য নয়। যাদের কাছে সময় ও দক্ষতা আছে তারাই এ ব্যবসা করতে পারবেন। নচেৎ এই ব্যবসা না করাটাই ভালো।