আপওয়ার্ক এবং ফাইভারে কাজ পাওয়ার উপায়

আপওয়ার্ক এবং ফাইভারে সহজে কাজ পাওয়ার উপায় কী

আপওয়ার্ক এবং ফাইভারে সহজে কাজ পাওয়ার উপায় কী

আপওয়ার্ক ফাইবার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ফ্রিল্যান্সিং গাইড ফ্রিল্যান্সিং টিপস মার্কেটপ্লেস
বর্তমানে বাংলাদেশী তরুণদের মাঝে ফ্রিল্যান্সিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পেশা। সবাই এখানে নিজেদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে হাজারো তরুণ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করে স্বনির্ভর হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে। 

পর্যাপ্ত দক্ষতা  পাশাপাশি  সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে যে কেউই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলো থেকে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে বেশ ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারে। বিশ্বজুড়ে হাজারো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর মধ্যে আপওয়ার্ক এবং ফাইবার সবথেকে জনপ্রিয়, এবং অন্যান মার্কেটপ্লেস এর তুলনায় এখানে কাজের ডিমান্ডও তুলনামুলক ভাবে বেশি।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কী

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বায়াররা তাঁদের প্রয়োজনীয় কাজ করানোর জন্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে জব পোষ্ট কিংবা অন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের কাজের জন্য উপযোগী দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের খোঁজ করে থাকেন। আর ফ্রিল্যান্সাররা এই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী পছন্দসই কাজটি খুঁজে থাকেন। অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে বায়াররা ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করিয়ে থাকেন। 

মূলত এই বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সংযোগস্থাপনারী ওয়েবসাইট ই হলো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। আপওয়ার্ক, ফাইভার, গুরুকূল, পিপল পার আওয়ার সহ বর্তমানে আরো অনেক জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস রয়েছে। মার্কেটপ্লেসের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা ও তেমনি বাড়ছে বহুলাংশে। তাই এসব মার্কেটপ্লেসে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ থাকার পাশাপাশি একটু কৌশলী হতে হবে।

আজ আমরা সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইটি মার্কেটপ্লেস অর্থাৎ আপওয়ার্ক এবং ফাইভারে কিভাবে খুব সহজেই কাজ পেতে পারেন সে সম্পর্কে আলোচনা করবঃ
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পাওয়ার উপায় কি? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোষ্টটি ফলো করতে পারেন।
 
আপওয়ার্ক
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট হচ্ছে আপওয়ার্ক (Upwork). ফ্রিল্যান্সার এবং বায়ারদের কাছে আস্থার অন্যতম প্রতীক এই আপওয়ার্ক। ১৯৯৮ সালে বিশ্ববাজারে সর্বপ্রথম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হিসেবে আসা ওডেক্স (Odesk) ই বর্তমানে আপওয়ার্ক হিসেবে সর্বজন পরিচিত। মূলত ২০১৫ সালে ওডেক্স আর ইল্যান্স একত্রিত হওয়ার পরই আপওয়ার্ক এর সূচনা হয়।

কাজের প্রকারকভেদ
আপওয়ার্ক এ প্রায় সব ধরনের কাজই পাওয়া যায়। আপনার দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে সঠিক কাজটি বাছাই করে কাজ শুরু করতে পারেন। আপওয়ার্ক মূলত কয়েকটি ক্যাটাগরিতে নানান ধরনের কাজ থাকে। Ways to get work on Upwork and Fiver. যেমনঃ

  • ডেভেলপমেন্ট এবং আইটি
  • ডিজাইন এবং ক্রিয়েটিভ
  • ফিন্যান্স এবং একাউন্টিং
  • এডমিন এবং কাস্টোমার সাপোর্ট
  • ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্কিটেকচার
  • সেলস এবং মার্কেটিং
  • রাইটিং এবং ট্রান্সলেশন

আপওয়ার্ক এ কাজের পরিমাণ অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর তুলনায় তুলনামূলক বেশি। তবে প্রতিটি কাজের বিপরীতে আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। তাই বুঝতেই পারছেন, এই মার্কেটপ্লেসে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই প্রতিযোগিতা করেই টিকতে হবে। তবে একটু কৌশলী এবং সূক্ষ্মবিষয় লক্ষ করলেই কিন্তু এই মার্কেটপ্লেসটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

আপওয়ার্ক এ কাজ পেতে হলে যা যা করণীয়ঃ
প্রথমে আপওয়ার্ক ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইন আপ পেইজে প্রবেশ করুন। অতঃপর প্রয়োজনীয় সব তথ্যাদি ঠিকঠাক ভাবে দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরী করুন। অ্যাকাউন্ট তৈরী হয়ে গেলে, প্রোফাইল তৈরীতে মনোযোগী হোন।

প্রোফাইলটিকে যথাসম্ভব সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। কারণ একটি সুন্দর এবং তথ্যবহুল প্রোফাইল কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক। বায়ার প্রদত্ত কোনো একটি কাজের বিপরীতে যখন অনেক ফ্রিল্যান্সার বিড করে থাকে, তখন প্রাথমিকভাবে বায়াররা ফ্রিল্যান্সারের প্রোফাইল দেখেও অনেক কিছু সিদ্ধান্ত নেন যে কাজটির জন্য আপনি উপযোগী কিনা। তাই ভূল কিংবা অবাঞ্চিত তথ্য পরিহার পূর্বক সুশৃঙ্খল এবং পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা সম্বলিত একটি প্রোফাইল তৈরী করুন।

একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য পোর্টফোলিও খুবই  দরকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ। মূলত পোর্টফোলিও হচ্ছে আপনার পূর্ববর্তী কাজের সুবিন্যস্ত সংকলন। অর্থাৎ আপনার করা পূর্ববর্তী প্রজেক্ট  বা কাজের বিবরণ সম্বলিত একটি ওয়েবসাইট। পোর্টফোলিও শুধু ওয়েবসাইট আকারেই হয়ে থাকে নাহ, বরং কাজের ধরন এবং প্রয়োজনীয়তাভেদে ওয়ার্ড ডকুমেন্ট, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, এক্সেল শীট ইত্যাদি আকারেও হয়ে থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুসারে পছন্দসই একটি পোর্টফোলিও তৈরী করুন। পোর্টফোলিও টি এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যেন কোনো বায়ার খুব সহজেই আপনার কাজের ধরণ সম্পর্কে বুঝতে পারে।

একটি সুন্দর পোর্টফোলিও সংযুক্ত প্রোফাইল তৈরী হয়ে গেলে, আপনার কাজ খোজায় মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপওয়ার্ক এর “ফাইন্ড ওয়ার্ক” ট্যাবটিতে প্রবেশ করলে অনেক কাজের সন্ধান পাবেন। এবং কাজগুলোতে ডেসক্রিপশন তথা কাজের বিবরণ ও দেখতে পাবেন। সেগুলো ভালোভাবে পড়ে কাজের ধরন বা মূল্যের দিক বিবেচনা করে প্রোপোজাল পাঠাতে পারেন। এক্ষেত্রে “সেন্ড প্রোপোজাল” বাটনে ক্লিক করে আপনার কাজের ধরন, পরিচয়, কাঙ্ক্ষিত মূল্য ইত্যাদি উল্লেখ করে দিবেন।

আপনার প্রোফাইল, পোর্টফোলিও, প্রোপোজাল ইত্যাদি বিবেচনাপূর্বক বায়ার যদি আপনাকে দিয়ে কাজটি করাতে আগ্রহী হয় তবে আপনার সাথে ফোন কিংবা মেসেজে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে আপনার যোগাযোগ দক্ষতাটা অবশ্যই ভালো হওয়া চাই। নতুবা কাজটিতে আপনার পারদর্শীতা থাকলেও সঠিক যোগাযোগ দক্ষতার অভাবে কাজটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সাবধানী হতে হবে। সবদিক বিবেচনায় বায়ার যদি আশ্বস্ত হয় তবেই কাজটি আপনি পাবেন।

ফাইভার
বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ফাইভার প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। বর্তমানে বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের কাছে মার্কেটপ্লেসটি তুমুল জনপ্রিয়। নানাবিধ সেবা শত ডলারের পাশাপাশি মাত্র পাঁচ ডলারে দিয়েও বায়াররা খুব সহজেই পেয়ে যান বলে ফাইভারের প্রতি বায়াররা অনেক বেশি আস্থাশীল। আর অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের মতো কোনো কাজের জন্য বিড করলে অর্থ পরিশোধের প্রয়োজন নেই বলে ফ্রিল্যান্সারদের কাছেও নির্ভরযোগ্য ফাইভার।

কাজের প্রকারভেদঃ
আপওয়ার্ক এর মতো ফাইভারেও প্রায় সব ধরনের কাজই পাওয়া যায়। এখানেও নানান রকম কাজ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। What is the easiest way to get a job on Upwork and Fiver? যেমনঃ 
  • গ্রাফিক্স এবং ডিজাইন
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • রাইটিং এবং ট্রান্সলেশন
  • ভিডিও এবং এনিমেশন
  • মিউজিক ও অডিও
  • প্রোগ্রামিং এবং টেক
  • বিজনেস
  • লাইফস্টাইল

ফাইভ ডলারে ফ্রিল্যান্সার পাওয়া যাবে এমন ধারণা নিয়ে উৎপত্তি হওয়া ফাইভারে বায়াররা খুব কম মূল্যের বিনিময়ে ছোট-ছোট কাজগুলো করিয়ে নিতেন পারেন বলে ভীড় জমান। তাই কাজের পরিমাণ নিয়ে এখানে সংশয় নেই। দক্ষতা থাকলে আপনিও খুব সহজেই এখান থেকে কাজ পেতে পারেন। এখানে মূলত বায়াররা ফ্রিল্যান্সার খুজে অর্ডার দিয়ে থাকেন কোনো কাজের জন্য।

ফাইভারে কাজ পেতে হলে যা যা করণীয়ঃ
প্রথমেই ফাইভার ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করে সাইন আপ করে পূর্বের ন্যায় বিভিন্ন তথ্য যেমন, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস সহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য প্রদান করে একটি একাউন্ট তৈরী করুন।
এরপর আপওয়ার্ক এ দেখানো পদ্ধতি অনুসারে প্রোফাইল তৈরী করে নিন। এখানেও পূর্বের বর্ণনা অনুযায়ী একদম সঠিক এবং নির্ভূল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করুন। এবং সর্বোপরি প্রোফাইলটিকে সুন্দর, তথ্যবহুল এবং আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। এরপর আপনার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা সম্বলিত পোর্টফোলিও টি সংযোজন করে দিন।

প্রোফাইল তৈরী হয়ে গেলে এবার গিগ তৈরীর পালা। মূলত গিগ হচ্ছে আপনি যে সার্ভিস বা প্রজেক্ট বিক্রি করতে চাচ্ছেন সেগুলো কিংবা কোনো কাজের অফার। ফাইভারে বিভিন্ন বায়াররা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাঁদের পছন্দের গিগগুলো খুজে ক্রয় করে থাকেন। তাই বুঝতেই পারছেন আকর্ষণীয় ভাবে গিগ উপস্থাপন কতটা জরুরি। আপনি যে সার্ভিস বা সেবা দিতে চাচ্ছেন সেই বিষয় সম্পর্কে সুন্দর একটি বর্ণনা প্রদান করে গিগ ডেসক্রিপশন দিন। এবং গিগের টাইটেল এবং থাম্বনেইল সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। প্রয়োজনে আপনি গিগে ভিডিও সংযুক্ত করতে পারেন। 

গিগে ভালভাবে সার্চ ট্যাগ গুলো দিন এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদিতে গিগ লিংক পাবলিশ করুন। এতে গিগের প্রতি ইম্প্রেশন বাড়ার দরুন, কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের সার্চে আপনার গিগটি উপরে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যার ফলে বায়ার পাওয়াটা তুলনামূলক বেড়ে যাবে। বায়ার রিকোয়েস্ট ফাইভারে কাজ পাওয়ার জন্য আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই মার্কেটপ্লেসে মূলত বায়াররা গিগ খুঁজে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ অফার করে থাকেন। 

বিপরীতে অনেক বায়ার আছেন, যারা এই এত এত গিগ দেখে পছন্দসই গিগটি বাছাই করে কাজ অফার করার মতো সময় কিংবা ধৈর্য্য থাকেনা। তাই এক্ষেত্রে তাঁরা বিভিন্ন জব পোষ্ট দেয় এবং সেখানে বায়ার রিকোয়েস্ট থেকে তাঁদের কাজের জন্য উপযোগী ফ্রিল্যান্সারদের খুঁজে নেয়। তাই আপনার পছন্দসই কোনো কাজ পেলে বায়ার রিকোয়েস্ট সেন্ড করুন। এবং বায়ারদের সাথে মার্জিত এবং দক্ষভাবে যোগাযোগ করুন। আপনার কাজ পারদর্শীতা, মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদির ভিত্তিতে খুব সহজেই এখান থেকে কাজ পেয়ে যেতে পারেন।

পরিশেষে আপনার ধৈর্য্য, পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতাই আপওয়ার্ক বা ফাইভারের মতো সেরা মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনার কাজ পাওয়ার পথকে সুগম করে দিবে। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত দক্ষতার পাশাপাশি সময়ানুবর্তিতা, যোগাযোগদক্ষতার সমন্বয়ই আপনাকে একজন পরিপূর্ণ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রতিষ্ঠা করবে। তাই পর্যাপ্ত দক্ষতা ও আপনার কৌশলী পদক্ষেপের মিশেলে আপওয়ার্ক কিংবা ফাইভারে কাজ করে আয় করুন, নিজে স্বাবলম্বী হোন, দেশের উন্নতিতে ভূমিকা রাখুন।